নেটফ্লিক্স উপস্থাপকের সমালোচনায় প্রত্নতত্ত্ববিদ

বিভাগ:

ইন্দোনেশিয়ার এক দল গবেষক দাবি করেছিলেন, পশ্চিম জাভায় অবস্থিত একটি কাঠামো পৃথিবীর সবচাইতে পুরাতন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোর একটি। সমসাময়িক অপর প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই দাবি নাকচ করেছেন কার্বন ডেটিং ফলাফলের অপব্যবহারের কথা উল্লেখ করে। এর পাশাপাশি তাদের সমালোচনায় উঠে এসছে নেটফ্লিক্সের একটি সিরিজ ও তার গবেষকের নাম।

গুনুং পাদাং নামের স্থানটি ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভা অঞ্চলে অবস্থিত। সেখানকার একটি ধ্বংসাবশেষকে পৃথিবীর সবচাইতে পুরাতন পিরামিড হিসেবে দাবি করা হয়েছিল দেশটির প্রত্নতত্ত্ব গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। তাদের অভিমত, এটি ২৫ হাজার বছর আগের স্থাপনা।

সমসাময়িক অপর প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলছেন, এই দাবি অগ্রহণযোগ্য। যেকোন স্থাপনার নিচের মাটি কার্বন-ডেটিংয়ে অনেক পুরাতন হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। তার মানে এই নয় যে ওই মাটিতে নির্মিত ধ্বংসাবশেষটি আসলেই প্রাচীন। ইন্দোনেশিয়ার গবেষণাপত্রটিতে ধ্বংসাবশেষের কার্বন ডেটিং না করে সেখানকার মাটির কার্বন ডেটিং করা হয়েছিল।

ইন্দোনেশিয়ার গবেষকরা যে গবেষণাপত্রে গুনুং পাদাংকে ২৫ হাজার বছরের পুরাতন হিসেবে দাবি করেছিলেন সেই গবেষণাপত্রটি সম্পাদনার সাথে জড়িত ছিলেন নেটফ্লিক্সের এইনশেন্ট অ্যাপোক্যালিপ্স সিরিজের উপস্থাপক গ্রাহাম হ্যানকক। গ্রাহাম হ্যানককের উপস্থাপনায় নির্মিত সিরিজটির মূল বক্তব্য, পৃথিবীর বর্তমান প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা বরফ যুগে লুপ্ত এক সভ্যতার সদস্যদের দান। তাদের হাত থেকেই পশু শিকারী আদি মানুষ সবকিছু শিখেছে!

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআরআইএনের ভূতত্ত্ববিদ ড্যানি হিলম্যান নাতাউইজায়া ‘গুনুং পাদাংকে’ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপনা দাবি করা গবেষণা দলটির সদস্য। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, হ্যানককের তত্ত্ব তার কাছে গ্রহণযোগ্য। লুপ্ত সেই সভ্যতার সদস্যরাই গুনুং পাদাং ‘স্থাপনার’ নির্মাণ কাজ সেখানকার মানুষদের শিখিয়েছে।

এতে প্রত্নতত্ত্ববিদরা সমালোচনায় মুখর হয়েছেন নেটফ্লিক্স সিরিজের হ্যানককের বিরুদ্ধে। সাউথ ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ মার্ক ডিফন বলেছেন, পৌরাণিক গল্পের সূত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার বর্ণনা সাজান হ্যানকক, যার অধিকাংশই ভুল। সাউদার্ন কানেক্টিকাট স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্ববিদ বিল ফারলি গার্ডিয়ানকে বলেছেন, শুধু যে ইতিহাসের অতি সরলীকরণ হয়েছে তা নয়, আদি মানুষ যে নিজের চেষ্টায় উদ্ভাবন করতে পারত সে কৃতিত্বটুকুও কেড়ে নিচ্ছেন হ্যানকক। আর কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্লিন্ট ডিবল আগেই বলে রেখেছিলেন, গবেষণাপত্রটি প্রকাশযোগ্যই নয়, প্রত্যাহার করা উচিত।

নেটফ্লিক্সের মতো প্ল্যাটফরমে ইতিহাস-প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে কল্পনাশ্রিত সিরিজ প্রচার করতে পারলেও হ্যানককের সম্পাদিত ইন্দোনেশিয়ান গবেষণাপত্রটি শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার হয়েছে। গুনুং পাদাং বিশ্বে সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি বা তা বিলুপ্ত একটি সভ্যতার সদস্যরা আদি মানুষকে শিখিয়েছে, এহেন তত্ত্ব শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা পায়নি।