রফতানি আয়ই কি আমেরিকার রাজনৈতিক পক্ষপাতের সূচক?

রফতানি আয় যার কাছ থেকে বেশি হয় যেকোনও রাষ্ট্র তার দিকেই সমর্থন দেবে। সাদা চোখে দেখা এই মূল্যায়ন কি আসলেই কার্যক্ষেত্রে সত্য হয়ে ওঠে? দুই দেশের মধ্যে বেছে যদি নিতেই হয় তাহলে শুধু রফতানি আয়ের ভরসাতেই কি শক্তিশালী দেশগুলো পক্ষ নির্ধারণ করে? আমেরিকার কথা ধরা যাক। বৈশ্বিক রাজনীতির সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশটির রফতানি আয়ই কি নির্ধারণ করে কার সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন হবে?

আমেইকার বিদেশ নীতি কি শুধু রফতানি আয়ের উপর নির্ভরশীল
ছবি: লি কোর্সি

চায়না যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তৃতীয় সর্বোচ্চ রফতানি আয়ের উৎস। কিন্তু সামরিক প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়ে চায়নাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে। ২০২২ সালের জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিতে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, প্রথাগত-অপ্রথাগত উভয় ধরনের সম্ভাব্য যুদ্ধে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম প্রতিপক্ষ চায়না। আইফোন এখনও চায়নাতে তৈরী হয়। কিন্তু চায়নার মালিকানাধীন হুয়াওয়ের পণ্যকে নিষিদ্ধ করে রেখেছে আমেরিকা।

চায়নার শিক্ষার্থীরা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা গবেষণার সুযোগ পায়। কিন্তু ২০২২ সালের প্রতিরক্ষা নীতিতে আমেরিকা উল্লেখ করেছে, চায়না থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীরা আমেরিকার গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি বেহাত হওয়ার প্রসঙ্গে একটি ঝুঁকি। রফতানি আয়ে আমেরিকার জন্য তৃতীয় সর্বোচ্চ উৎস হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ চীন সাগরে চায়নার উপস্থিতির বিরুদ্ধে আমেরিকা সক্রিয় অবস্থান বজায় রেখেছে। রফতানি আয় বেশি পায় বলেই তাইওয়ানের স্বাধীনতার প্রশ্নে আমেরিকা নিরব থাকে না।

আমেরিকার রফতানি আয়ের উৎসের দিক থেকে ২০২৩ সালের তালিকায় প্রথম দশেই আছে ব্রাজিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা নজরদারি জোট ফাইভ আইজ, নাইন আইজ বা ফরটিন আইজ কোনটিরই আনুষ্ঠানিক সদস্য নয় দেশটি। অথচ আমেরিকার রফতানি আয়ের পরিমাণের দিক থেকে ব্রাজিলের নিচে থাকা অস্ট্রেলিয়া উপরের সবগুলো জোটের আনুষ্ঠানিক সদস্য।

তুরস্ক, সৌদি আরব ও ইসরায়েল এই তিন দেশ থেকে পাওয়া আমেরিকার রফতানি আয় প্রায় কাছাকাছি, ১৩ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে। কিন্তু আমেরিকার সর্বোচ্চ অনুদান পাওয়া দেশগুলোর একটি ইসরায়েল।

একই ধরনের বাস্তবতা দেখা যায় ইউক্রেনের ক্ষেত্রে। ২০২৩ সালে আমেরিকার রফতানি আয়ের উৎসের দিক থেকে ইউক্রেনের অবস্থান ৮০। কিন্তু রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের জেরে ২০২২ সালে ইউক্রেন ইসরায়েলের চাইতে বেশি মার্কিন সামরিক অনুদান পেয়েছে।

আমেরিকার রফতানি আয়ের উৎসের দিক থেকে ২০২৩ সালে ইরাকের অবস্থান ৬৩ আর বাহরাইনের ৭০। পারস্য উপসাগরের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রিক হোক অথবা অন্য কোনও ইস্যুতে, আমেরিকা কি শুধু রফতানি আয়ের কথা ভেবেই বাহরাইনের লাগাম ইরাকের হাতে দিয়ে দেবে? না কি ইরানি প্রভাবের কথা মাথায় রেখে রাজনৈতিক-সামরিক অবস্থান বেছে নেবে?