রাশিয়া-পুতিনের বিরুদ্ধে ছেলেধরা হওয়ার অভিযোগ

রাশিয়া ইউক্রেনীয় ছেলেমেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর এতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিমানের কয়েকটি সরাসরি পুতিনের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থার। সঙ্গে আছে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিমান। ফলে ছেলেধরা হওয়ার অভিযোগে নাম উঠে আসছে খোদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের। অভিযোগ তুলেছে, আমেরিকার ইয়েল স্কুল অফ পাবলিক হেলথের ‘হিউমানিটেরিয়ান রিসার্চ ল্যাব’ (এইচআরএল)। তাদের প্রতিবেদনটি উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
ছবি: ক্রেমলিন

ইয়েলের স্কুল অফ পাবলিক হেলথের সংস্থা এইচআরএল আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের অর্থায়নে পরিচালিত। এর আগেও সংস্থাটি ইউক্রেনীয় শিশুদের তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গবেষণা করেছে। এবার তারা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ইউক্রেন থেকে ৩১৪টি শিশুকে রাশিয়া ধরে নিয়ে গিয়েছে এবং তাদের দত্তক দিয়েছে রাশিয়ান পরিবারগুলোর কাছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছেলেমেয়েদের ‘রাশিয়ান’ হিসেবে গড়ে তোলা। 

ইউক্রেনে ‘ছেলেধরা’ হওয়ার অভিযোগ রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম নয়। ২০২৩ সালে মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং তার সরকারের শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া লোভভা বেলোভার বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় শিশুদের ধরে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। রাশিয়া সেসময় বলেছিল, তারা মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় শিশুদেরকে নিরাপত্তা দিতে তাদের নিয়ে গিয়েছে। 

৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে সরাসরি। কারণ এসব শিশুদের ইউক্রেন থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যেসব বিমান ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো সরাসরি পুতিনের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা দ্বারা পরিচালিত। এমন একটি সংস্থা ‘প্রেসিডেন্সিয়াল প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট’ যা রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের অধীন। এছাড়াও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিমানও ইউক্রেনীয় শিশুদের রাশিয়ায় নিয়ে যেতে ব্যবহৃত হয়েছে মর্মে তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে এইচআরএল। 

ইয়েল স্কুল অফ পাবলিক হেলথের ,হিউমেনিটেরিয়ান রিসার্চ ল্যাবের’ নির্বাহী পরিচালক নাথানিয়াল রেমন্ড। তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। জাতিসংঘের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদের ডিসেম্বর মাসের সভাপতি আমেরিকা। 

নাথানিয়াল রেমন্ডের দাবি, তাদের গবেষণাপত্রে এমন সব তথ্য-প্রমাণের উল্লেখ রয়েছে যা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পুতিনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হতে পারে। এক জাতিসত্তার মানুষকে আর এক জাতিসত্তায় বলপ্রয়োগের মাধ্যমে যুক্ত করার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন

গত বছর যখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছিল তখন রাশিয়ার মারিয়া লোভভা বেলোভা বলেছিলেন, ইউক্রেন থেকে রাশিয়া কাউকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ে যায়নি। বরং অভিভাবক নিখোঁজ এমন শিশুদের তারা মানবিকতার খাতিরে সরিয়ে নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে অপরাপর যেসব শিশুদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল তাদের বাবা-মা বা আইনগত অভিভাবকের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। সেসব শিশুদের ‘রাশিয়ান’ করে তোলা হয়নি, বরং তাদের রাশিয়ায় ‘অস্থায়ী অভিভাবকদের’ কাছে রাখা হয়েছে!

এইচআরএলের প্রতিবেদন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপিত হলে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি কাড়বে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও তা মূল্যায়িত হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, রাশিয়া আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য নয়। ফলে রাশিয়ার যাদেরকে অভিযুক্ত করা হবে আন্তর্জাতিক আদালতে উপস্থিত হওয়াটা তাদের জন্য অনিবার্য নয়। অভিযুক্তরা অবশ্য আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভিসা পেতে বিঘ্নের মুখে পড়তে পারেন।